কদম কথন

বর্ষার দূত হিসেবে পরিচিত কদম ফুলের ঘ্রাণে কে না মাতাল হয়েছে! প্রতি বছর বর্ষার প্রথম দিন উদযাপিত হয় কদম ফুলকে সাথে নিয়ে। অনেক রোমান্টিক যুগলের দিন শুরু হয় এই ফুল আদান প্রদানের মাধ্যমে।
কদম ফুল । ছবি- লেখক
সেদিন যখন প্রথম রাস্তার ধারে কদম গাছটাকে ফুলে ফুলে ভর্তি দেখলাম, চোখ জুড়িয়ে গেল। এই ফুলকে কেন এত মানুষ পছন্দ করে, কেন বর্ষা শুরু হলেই বাচ্চাদের হাতে হাতে কদম ফুল বিক্রি করতে দেখা যায়, কেনই বা কদম ফুল উপহার পেলে প্রেয়সীরা খুশিতে রঙিন হয়ে যায়.. আরো কত কী ভাবতে থাকলাম! এর পরে প্রায় প্রতিদিনই একবার করে পুরো গাছটাকে দেখেই তবে গন্তব্যে যাওয়া যেন রুটিনের অংশ হয়ে গেল। দেখলেই সুখ অনুভূত হত। পরিপূর্ণতার একটা প্রতীক যেন গাছটা। কেননা কেউ একটা ফুলও ছিড়ছে না গাছ থেকে, এমনকি ফুল নিচে পড়লেও কেও তুলছে না সেটা। আশেপাশের মানুষের হয়ত ব্যস্ততার মাঝে গাছটাকে দেখবার একটু অবসরও নেই। তাই ভালো। মানুষের আবেগ থেকে দূরে থাকাই গাছ-ফুল দুজনেরই ভালো ।
কদম ফুল । ছবি- বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম
বাসার পাশের কদম গাছটা চেনার পর থেকে রাস্তার ধারে আরো কতক কদম গাছ সনাক্ত করতে থাকি। যাত্রা পথে ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কত ভাবনাই না মাথায় চলতে থাকে! আর তখনই মনের মধ্যে উকি দিয়ে ওঠে এক গুচ্ছ কদম হাতে নীল শাড়িতে ব্লু জিন্স ব্যান্ডের গান। আহা! এ যেন বৃষ্টিতে ভেজার প্রথম শর্ত। বৃষ্টি আর কদম ফুল যেন প্রকৃতির দুটি অবিচ্ছেদ্য রূপ।
প্রাকৃতিকভাবেই এমন সুরক্ষিত এই ফুলের এমন করুণ দশা হবে আমি সচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। বর্ষা শুরু হয়ে গেলেও অনেকদিন বৃষ্টি হয় নি। বৃষ্টি যখন আসলো একদম ঝাঁপিয়ে নামলো। বৃষ্টির পর প্রকৃতির সবকিছু কেমন একটু বেশি স্পষ্ট হয়ে যায়। আশপাশ পরিষ্কার দেখা যায়। অনেকদিন পর গাছের পাতাগুলো চমৎকার দেখাচ্ছিল। কিন্তু কদম গাছটার অবস্থা! সেখানেই বৃষ্টির যত দোষ। বৃষ্টির দাপটে কদম গাছের প্রতিটা ফুলের পাপড়ি পড়ে গিয়ে ফুলগুলোর একেবারে বেহাল দশা হয়ে গেল। আর কিছুতেই ওগুলোকে ফুল বলে চেনার উপায় নেই। একটা ফুলও অক্ষত দেখা যাচ্ছিল না। এই করুণ দশার গাছটার একটা ছবি তুলতে গিয়েও তুলতে পারলাম না, কষ্টে! ফুল গাছেই সুন্দর, এটাই কি হওয়ার কথা ছিল না? অথচ অন্য সব গাছের যে ফুল বৃষ্টির আগেই কেউ তুলে সরিয়ে নিয়েছে তারা মরে গিয়েও বেঁচে থাকে তরুণ-তরুণীদের হাতের মুঠোয়, সুখকর মূহুর্তের সাক্ষী হিসেবে।

পূর্ববর্তী পরবর্তী