শীতল পাটি বিলুপ্তির পথে!

শীতল পাটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প। মুর্তা বা পাটি বেত বা মোস্তাক নামের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের ছাল থেকে এ পাটি তৈরি হয়। হস্তশিল্প হিসেবেও এ পাটির যথেষ্ট কদর রয়েছে। বিশেষ করে শুকনা মৌসুমে মুর্তা থেকে বেত তৈরি করে, বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘ সময় নিয়ে যত্ন সহকারে বোনা হয় শীতল পাটি। শীতল পাটিতে কারিগররা দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলেন নানা ধরনের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি।
ভাজ করে বিক্রির উদ্দেশ্য প্রস্তুত করা শীতল পাটি। ছবি- ফেসবুক
শীতল পাটি নামের মধ্যেই রয়েছে এর বিশেষত্ব। এই পাটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গরমে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। শীতলতার পাশাপাশি নানান নকশা, রং ও বুনন কৌশল মুগ্ধ করে সবাইকে। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যসম্মত এই পাটি। সিলেট জেলার বালাগঞ্জ শীতল পাটির জন্য প্রসিদ্ধ।
শীতল পাটি তৈরির প্রধান উপকরণ মুর্তা গাছ। ছবি- ফেসবুক
বৃহত্তর সিলেটের প্রতিটি উপজেলায় কমবেশি শীতল পাটি তৈরি করা হতো। এছাড়াও টাঙ্গাইল, জামালপুর, লক্ষ্মীপুর ও বরিশালের কিছু অঞ্চলে শীতল পাটি তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে শীতল পাটির অন্যতম উপকরণ মুর্তা গাছের বিলুপ্তির কারণে এই শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। আগে হাওরের নিম্ন অঞ্চলে মুর্তা গাছ ব্যাপক হারে জন্মাত। বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার গ্রামাঞ্চল থেকেই ক্রমেই শীতল পাটির প্রধান উপকরণ মুর্তা কিংবা মুর্তার বাগান হারিয়ে যেতে বসেছে।
পাটি বুননের উপকরণ প্রস্তুতি। ছবি- ফেসবুক
একসময় বিভিন্ন খাল-বিল ও লোকালয়ের নিচু জমিতে প্রচুর মুর্তা গাছ জন্মাত। কিন্তু বর্তমানে বন উজাড় ও আবাসন প্রকল্পের জন্য নিচু জমি ভরাটের জন্য শীতল পাটি বানানোর অন্যতম উপকরণ মুর্তা দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠায় কাঁচামালের অভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ পাটি শিল্পীরা। তাই বাণিজ্যিকভাবে এখনই পরিত্যক্ত নিচু জমিতে মুর্তার চাষ বৃদ্ধি না করতে পারলে এই শিল্পের সাথে জড়িত ৭ থেকে ৮ লক্ষ লোক বেকার হয়ে পড়বে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে মুর্তার চাষ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একই সাথে মুর্তা চাষের মাধ্যমে বেকার যুবক ও মহিলাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বাংলাদেশের শীতল পাটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। হারিয়ে যেতে বসা এই দেশীয় শিল্পকে টিকিয়ে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।
দৃষ্টিনন্দন সব নকশায় বোনা হয় শীতল পাটি। ছবি- ফেসবুক


তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন সংবাদপত্র
পরবর্তী