প্রকৃতি কন্যা জাফলং যাবেন কীভাবে আর দেখবেন কী কী?

বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি দর্শনীয় স্থান জাফলং। পিয়াইন নদীর সৌন্দর্য, জাফলং জিরো পয়েন্টে পাথরের উপরে স্বচ্ছ পানির জলকেলি, ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি ঝুলন্ত ব্রিজ, বড় বড় পাহাড়, মায়াবী ঝরনা, খাসিয়া পুঞ্জি, চা বাগান এবং জাফলং টিলার উপরে বিজিবি ক্যাম্প থেকে জৈন্তিয়া পাহাড়ের ভাজে ভাজে চমৎকার এক ছোট্ট শহর ডাউকিকে দেখতে পাবেন। এছাড়াও তামাবিল স্থলবন্দর ও এর সামনে দূরের পাহাড়ে অনেকগুলো ঝরনা দেখতে পাবেন। সবমিলিয়ে অসাধারণ পরিবেশ পাবেন জাফলং ঘুরতে গেলে।
ওপাড়ের বড় বড় পাহাড় ও ঝুলন্ত সেতু সবই ভারতের সীমানার ভেতরে। ছবি- লেখক
ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেন উভয় পথেই জাফলং যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সিলেটগামী যেকোন বাসে করে সিলেট কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে, কদমতলী বাসস্টান্ড থেকে জাফলংগামী বাস পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সিলেট বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে হবে। আর সরাসরি ঢাকা টু জাফলং বাসে যেতে চাইলে সাগরিকা পরিবহনের বাসে যেতে পারেন। ভাড়া পরবে জনপ্রতি ৭০০/৮০০ টাকা।
ট্রেনে করে গেলে ঢাকার কমলাপুর থেকে সিলেটগামী ট্রেনে উঠতে হবে। ট্রেনে করে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে অটোরিকশা করে সিলেট বাসস্ট্যান্ডে চলে আসুন। সিলেট কদমতলী বাসস্টান্ড থেকে বাসে করে জাফলং যেতে চাইলে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৮০/১১০ টাকা। এছাড়া সিলেট থেকে সিএনজি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও সহজেই জাফলং আসতে পারবেন।
জাফলং উচু টিলা থেকে মেঘালয়ের ডাউকি শহর দেখতে পাবেন। ছবি- লেখক
জাফলং আসার পরে প্রথমেই অটোরিকশা নিয়ে চলে আসুন টিলার উপরে বিজিবি ক্যাম্পে। এই টিলা থেকে খুব সুন্দরভাবে মেঘালয়ের ডাউকি শহর দেখতে পাবেন এবং ভারতীয় ও বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল বাজার দেখতে পাবেন।
জাফলং জিরো পয়েন্টে যেদিকে চোখ যাবে শুধু পাথর আর পাথর। ছবি- লেখক
টিলার উপরের দৃশ্য দেখা শেষ হলে এবার সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নিচে চলে আসুন এবং হেঁটে হেঁটে জাফলং জিরো পয়েন্টে চলে আসুন। জিরো পয়েন্টে লকার ভাড়া পাওয়া যায়। আনলিমিটেড সময়ের জন্য লকার ভাড়া ১০০ টাকা। অনায়াসে ২/৩ জনের জিনিসপত্র লকারে রাখা যাবে। লকার ভাড়া হয়ে গেলে জিরো পয়েন্টের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন এবং স্বচ্ছ পানিতে গোসল সেরে নিতে পারেন। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর ক্যাম্প দেখতে পারবেন এবং ডাউকি ঝুলন্ত সেতু দেখতে পারবেন। অবশ্যই মনে রাখতে হবে জিরো পয়েন্ট হলো দুইদেশের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা তাই কোনভাবেই সীমানা অতিক্রম করা যাবেনা। জিরো পয়েন্টে শুধু পাথর আর পাথর। পানির নিচেও পাথর, তাই খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।
জাফলং জিরো পয়েন্ট। এখানে গোসল করতে পারবেন। ছবি- লেখক
জিরো পয়েন্ট ভালোভাবে দেখা শেষ করে নৌকা ভাড়া করে চলে আসুন মায়াবী ঝরনা বা সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা দেখতে। জনপ্রতি আপডাউনে নৌকা ভাড়া নিবে ১০০ টাকা। তবে আপনি শুধু মায়াবী ঝরনায় আসার জন্য নৌকা ভাড়া করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৩০/৫০ টাকা লাগবে। মায়াবী ঝরনার অবস্থান ভারতের সীমানার ভেতরে। বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ঝরনাটি উন্মুক্ত। ঝরনার শীতলজলে গোসল করতে পারেন। ঝরনার উপরে উঠার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন। মায়াবী ঝরনা দেখার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল।
মায়াবী ঝরনা বা সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা। বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে আসলে প্রচুর পানি পাবেন। ছবি- লেখক
মায়াবী ঝরনা দেখা শেষ হলে হেটে হেঁটে চলে আসুন খাসিয়া পুঞ্জিতে। খাসিয়া পল্লীতে ঢুকতেই দুইপাশে দেখবেন বিশাল বিশাল সুপারি বাগান এবং সুপারি গাছের সাথে জড়ানো পান গাছ। খাসিয়ারা সুপারি বাগানে পানও চাষ করে। অটোরিকশা ভাড়া করে খাসিয়া পুঞ্জি ও চা বাগান ভালো করে ঘুরে দেখতে পারবেন। অটোরিকশা রিজার্ভ ৪০০ টাকা নিবে, মোট ৮ জন যেতে পারবেন।
স্বচ্ছ জলধারার পিয়াইন নদী। ছবি- লেখক
খাসিয়াপল্লী ও চা বাগান দেখা শেষ করে নৌকা ভাড়া করে পিয়াইন নদী ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন। নৌকা ভাড়া করার সময় অবশ্যই দর কষাকষি করে ভাড়া করবেন। আপ-ডাউন রিজার্ভ করলে কতক্ষণ সময় নৌকা আপনার জন্য অপেক্ষা করবে এটা অবশ্যই কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। পিয়াইন নদীতে সাঁতার বা গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে প্রতিবছরই পর্যটক মারা যাচ্ছে, তাই সাঁতার না জানলে এই নদীতে নামবেন না।
আপনি চাইলে রাতে জাফলং হোটেল ভাড়া করেও থাকতে পারবেন। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত অনেকগুলো পর্যটন হোটেল রয়েছে। খাবারের জন্য ভালো মানের রেস্টুরেন্টও পাবেন।
সবমিলিয়ে খুব সহজেই ঢাকা থেকে ২ রাত ১ দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করলে জাফলং ভালোভাবে ঘুরে আসতে পারবেন।

পূর্ববর্তী পরবর্তী