একদিনে ঘুরে আসুন নিকলী হাওর ও আশপাশের পর্যটন স্পট

নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে একদিনে নিকলী হাওর ভ্রমণ করে আসতে পারবেন। এজন্য আপনাকে সঠিক তথ্য জেনে তারপর ভ্রমণে বের হয়ে পড়তে হবে।
হাওরে যতদূর চোখ যায় মনে হয় পানি আর পানি । ছবি- লেখক
ঢাকা থেকে ট্রেনে এবং বাসে উভয়ভাবেই নিকলী হাওর যাওয়া যাবে, তবে সরাসরি কোন বাস বা ট্রেন যায়না। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে যাতায়াত ও অনন্যা সুপার সহ আরো কিছু বাস কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায় যায়। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ গামী বাসে খুব সকালে উঠে যেতে হবে। সকাল ৫:০০ টা থেকে বাস ছাড়া শুরু করে, তাই আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব সকালের বাস ধরতে হবে। বাসে করে কটিয়াদি বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি ভাড়া করে চলে যাবেন সোজা নিকলী বাজারে, নিকলী বাজার থেকে অটো নিয়ে চলে আসবেন নিকলী বেড়িবাঁধের শেষ প্রান্তে।
সারি সারি ট্রলার থেকে ভাড়া করে নিতে পারেন চাহিদা মত একটি । ছবি- লেখক
ট্রেনে আসলে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জগামী এগারো সিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনে উঠতে হবে। সকাল ৭:১৫ এ ট্রেন ছেড়ে আসে কমলাপুর থেকে। ট্রেনে আসলে কিশোরগঞ্জ সদর স্টেশনের আরেকটু আগে গচিহাটা বা মানিকখালি স্টেশনে নেমে সিএনজি ভাড়া করে খুব সহজেই চলে আসতে পারবেন নিকলী বেড়িবাঁধে।

নিকলী হাওরে ভ্রমণ করার জন্য নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করতে হবে। ট্রলারের সাইজ ও ঘন্টার হিসাবে ভাড়া কম বেশি হয়ে থাকে। ছোট সাইজের ট্রলার প্রতি ঘন্টার জন্যে ৫০০/৬০০ টাকা করে নিবে, বড় সাইজের ট্রলার প্রতি ঘন্টার জন্যে ৭০০/৮০০ টাকা নিবে। একটা ট্রলারে অনায়াসে ১০ থেকে ৩০ জন লোক ভ্রমণ করা যায় ( সাইজ অনুযায়ী)। আমরা ১০ জনের জন্য মিডিয়াম সাইজের ট্রলার ৬ ঘন্টার জন্যে ৪ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করেছিলাম। ট্রলার ভাড়া হয়ে গেলে নিকলী হাওর ঘুরে চলে আসতে পারেন মিঠামইন উপজেলায়।
বক, পানকৌড়িসহ নানান প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে হাওরের বিস্তৃত জলরাশিতে । ছবি- লেখক
মিঠামইন নৌকা ঘাটে ট্রলার রেখে অটো রিকশা বা মাহিন্দ্রা করে ঘুরে আসতে পারেন ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক থেকে। এই সড়কটি হাওরের মাঝখানে নির্মিত। এই সড়কে চলতে চলতে দুপাশের হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। অটোরিকশায় প্রতিজনের কাছ থেকে ভাড়া নিবে আপ ডাউনে ১৪০ টাকা। তবে গাড়ি রিজার্ভ নিলে ৫ জনের জন্য ৪০০/৫০০ টাকার মধ্যে ভাড়া করতে পারবেন। আমরা ৫০০ টাকা দিয়ে রিজার্ভ ভাড়া করেছিলাম। বর্ষাকালে যেদিকে চোখ যাবে শুধু পানি আর পানি চোখে পড়বে। এই সড়কটি সম্পূর্ণ ঘুরে দেখতে প্রায় ২ ঘন্টা সময় লেগে যাবে। এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হাওরের মাঝখানে অনেক ছোট ছোট গ্রাম দেখতে পারবেন। এবং প্রচুর পরিমাণে হাঁসের খামার দেখতে পারবেন। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার মনকে ভরিয়ে দিবে।
ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক । ছবি- লেখক
অলওয়েদার সড়ক দেখা শেষ হলে চলে আসবেন মিঠামইন নৌকাঘাটে সেখানে হাওরের মাছ বা হাঁসের মাংশ দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিতে পারেন। খাওয়া শেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের বাসভবন দেখে আসতে পারেন।
সড়কের দুপাশে জলরাশির পাশাপাশি চোখে পড়বে মানুষের সংগ্রামী জীবনের চিত্র । ছবি- লেখক
মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের চমৎকার সব দৃশ্য দেখা শেষ করে আবারও ট্রলার নিয়ে চলে আসতে পারেন ছাতিরচর হিজলবনে। হিজলবনে নৌকা থামিয়ে হাওরের পানিতে গোসল করে নিতে পারেন। সাতার না জানলে অবশ্যই লাইফ সাপোর্ট জ্যাকেট পরিধান করে পানিতে নামতে হবে। গোসল সেরে আবারও ট্রলারে উঠে বিকালের হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে চলে আসুন নিকলী বেড়িবাঁধে। সন্ধ্যার আগেই নিকলী হাওর ভ্রমণ শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে।

বি:দ্র: নৌকা ভাড়া, অটোরিকশা রিজার্ভ ভাড়া করার সময় দর কষাকষি করে উঠবেন এবং কোথায় কোথায় ঘুরবেন এবং কত ঘন্টা ঘুরবেন এগুলো ফাইনাল করেই তারপর ভ্রমণ শুরু করবেন, না হলে ঝামেলায় পড়তে পারেন।

মনে রাখবেন হাওর আমাদের দেশের একটি প্রাকৃতিক জলাভূমি। এখানে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। তাই জীববৈচিত্র্যের কোন ক্ষতি সাধন হয় এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন। পানিতে প্লাস্টিকের বোতল, অন-টাইমের গ্লাস, প্লেট এবং পলিথিন ফেলবেন না।

একদিনেই চমৎকার এই নিকলী হাওর ও ইটনা- মিঠামইন- অষ্টগ্রাম সড়ক এবং ছাতিরচর হিজল বন ভ্রমণ সম্ভব। এজন্য অবশ্যই খুব সকালের বাস বা ট্রেনে উঠতে হবে। চাইলে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন।
পূর্ববর্তী পরবর্তী