দেশীয় ভেষজ ফল আমলকী
পরিচয়
ইংরেজি নাম: Aowla (Emblica)
অন্যান্য নাম: আমলকীর ইউনানি নাম আমলা, আয়ুর্বেদিক নাম ধাত্রী, শ্রীফল বা অসৃত ফল (আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে একে রোটিনও বলা হয়)।
বৈজ্ঞানিক নাম: phyllanthus emblica
জন্মস্থান
এর আদিভূমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, তবে পাহাড়ি অঞ্চলে এটি ভাল জন্মে।
প্রাপ্তিস্থান
বাংলাদেশে আমলকী টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার বনাঞ্চলে ভাল জন্মে। তাই এসব অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া নরসিংদী, গাজীপুরসহ অন্যান্য অঞ্চলেও বসতবাড়ির আশপাশে ভালই জন্মে।
আমলকী চাষ করে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব । ছবি- লেখক |
চাষাবাদ প্রক্রিয়া
আমলকীর বীজ থেকে এর বংশবিস্তার করা হয়, আবার কলম করেও করা যায়। ফলন্ত গাছের শেকড় থেকেও কখনও কখনও নতুন চারা গজাতে দেখা যায়। মার্চ-এপ্রিল বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। পরিপক্ব ফল রোদে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বপনের আগে গরম পানিতে ৬-৭ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়।অঙ্কুরিত হতে বা চারা গজাতে ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগে। চারা দুই থেকে তিন বছর বয়সে অন্যত্র রোপণ করা যায়। সাধারণত ৫-৭ বছরের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে।
কেন এর চাষ করবেন?
প্রথমত এটি আমাদের দেশী ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন। হালকা সবুজ ও হলুদ রঙের এ ফলটি স্বাদে একটু টক মনে হলেও ফলটিতে রয়েছে পাঁচ প্রকারের স্বাদ। সাধারণত বসন্তকালে ফুল ও শরৎকালে ফল ধরে তবে এটি ১২মাসই পাওয়া যায়। গাছ থেকে সংগ্রহের পর থেকে শুকানোর সাথে সাথে এর ভিটামিন সি’র মাত্রাও আস্তে আস্তে কমতে থাকে, তাই যতটা সম্ভব টাটকা বা হলুদ-সবুজ রং তথা কচি অবস্থায় খাওয়াই ভাল। শুষ্ক হলে ধূসর ও কালো বর্ণ ধারণ করে। তখন ভিজিয়ে পানি ঔষধ হিসেবে পান করা যায়।
আমলকীর পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০গ্রাম আমলকীতে যা থাকে-জলীয় অংশ ৯১.৪ গ্রাম
প্রোটিন ০.৯ গ্রাম
শর্করা ০.২ গ্রাম
খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম
আঁশ ৩.৪ গ্রাম
খাদ্যশক্তি ৭০ কিলোক্যালরি
ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম
লৌহ ৩.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৪৬৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১ ১০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ ২০.০৮ মিলিগ্রাম
চর্বি ০.২ মিলিগ্রাম
এছাড়াও শরীরের জন্য উপকারী আরও পুষ্টি উপাদান রয়েছে আমলকীতে।
উপকারিতা
আমলকীর যেমন রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ তেমন রয়েছে এর অনেক ভেষজ উপকারিতা।
যেমন-
√- আমলকীর টক ও তেঁতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনা, হাপানী, সর্দি-কাশি, বহুমূত্র, অজীর্ণ ও জ্বর, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভালো কাজ করে।
√- নতুন রক্ত, গোশত ও হাড় তৈরিতে বিশেষভাবে কাজ করে।
√- এটি হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে, মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে এবং শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। দাঁত ও নখ ভাল রাখে।
√- ত্বক ও চুল সুস্থ ও সুন্দর করে। শুকনো আমলকী চুল বৃদ্ধি ও মজবুত করে। খুশকি দূর করে।
√- পায়খানা স্বাভাবিক রাখা ও পুরুষের দেহে বীর্যবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এ্যাজমা, পাইলস ও ব্রঙ্কাইটিস সমস্যা কমায়।
√- এর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অ্যাসিডিটি কমায় ও লিভার ভাল রাখে।
√- চর্মরোগের চিকিৎসায়ও আমলকী ব্যবহার করা হয়।
√- নতুন রক্ত, গোশত ও হাড় তৈরিতে বিশেষভাবে কাজ করে।
√- এটি হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে, মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে এবং শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। দাঁত ও নখ ভাল রাখে।
√- ত্বক ও চুল সুস্থ ও সুন্দর করে। শুকনো আমলকী চুল বৃদ্ধি ও মজবুত করে। খুশকি দূর করে।
√- পায়খানা স্বাভাবিক রাখা ও পুরুষের দেহে বীর্যবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এ্যাজমা, পাইলস ও ব্রঙ্কাইটিস সমস্যা কমায়।
√- এর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অ্যাসিডিটি কমায় ও লিভার ভাল রাখে।
√- চর্মরোগের চিকিৎসায়ও আমলকী ব্যবহার করা হয়।
সতর্কতা
কিডনি রোগীদের আমলকী খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারবেন।
খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি
সাধারণত আমলকী সরাসরি গাছ থেকে সংগ্রহ করে চিবিয়ে অথবা এর বিচিত্র স্বাদ পেতে সামান্য লবণ মিশিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া আমলকী খাওয়ার হরেকরকম পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- আধা চূর্ণ শুকনো আমলকী পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া যায়। আচার করে, জুস বানিয়ে ও চাটনি করে খাওয়া যায়। এছাড়াও এর জ্যাম, মোরব্বা বানিয়ে খাওয়া যায়। আমলকী শুকিয়ে গুঁড়ো করে দুধের সাথে অথবা মধু ও মাখনের সাথে মিশিয়ে শরবত করে খাওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, এত যার গুণাগুণ সেই দেশীয় ভেষজ ফল আমলকী খাওয়া ও এর চাষ করা ব্যাপক লাভজনক। এতে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
লেখক