আমাদের ফজলি আম

ফজলি আম বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই পণ্য)। ভারত বহু পূর্বে এই আমের জি আই সনদ পেলেও, ২০২২ সালে বাংলাদেশ যৌথভাবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জন্য ফজলি আমের ভৌগোলিক সূচক লাভ করে। বর্তমানে বাংলাদেশের ১১তম জি আই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পণ্য হলো ফজলি আম।
ফজলি আম । ছবি- লেখক
ফজলি আমের নামকরণ নিয়ে খুবই চমকপ্রদ একটি ঘটনা রয়েছে। ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতান ইউসূফ শাহ্‌’র অন্যতম স্ত্রীর নাম ছিলো সুলতানা ফাদ্‌লী বিবি। নতুন বিয়ে হয়ে আসার পর তিনি একবার একটি আম খেয়ে তার আঁটি প্রাসাদের বাগানে ফেলেছিলেন। ক্রমান্বয়ে সেই আঁটি থেকে গাছ হয় ও তাতে আমও ধরে! আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে- ওই গাছের আমগুলো দিন দিন বড় হচ্ছিলো, সেই সাথে ঐ আমের সাথে পাল্লা দিয়েই যেনো সুলতানাও মোটা হচ্ছিলেন! প্রাসাদের দাস-দাসীরা এই নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতো এবং সুলতানার নামানুসারে আমের নামও দিয়েছিলো ফাদ্‌লী। কালক্রমে ফাদ্‌লী (فَضْليّ ) ফাযলী ও পরে আরও বিকৃত হয়ে ফজলীতে পরিণত হয়।

আকারে বেশ বড় এই আম সাধারণত অন্য আম থেকে একটু দেরিতে পরিপক্ব হয়। বাংলাদেশের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে ফজলি আম উৎপন্ন হয়। একেকটি ফজলি আম প্রায় ১ কেজি ওজনও হতে পারে। ফজলি আম খুবই রসালো ও আঁশবিহীন এবং খুবই মিষ্টি হয়ে থাকে। এই আমে শাঁসালো অংশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় চাটনি ও আচার তৈরিতে বেশি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে ফজলি আম পাওয়া যায়।

ফজলি আম গড়ে লম্বায় ১৩.৮ সে.মি., চওড়ায় ৯.৫ সে.মি. ও উচ্চতায় ৭.৮ সে.মি. হয়। গড়ে ওজন হয় ৬৫৪.৪ গ্রাম। আমটি দীর্ঘ এবং ঈষৎ চ্যাপ্টা। পাকা আমের খোসা কিছুটা হলুদ হয়ে ওঠে। শাঁস হলুদ, আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি। খোসা পাতলা। আঁটি লম্বা, চ্যাপ্টা ও পাতলা। এই আমে শর্করার পরিমাণ ১৭.৫ শতাংশ। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বা মোটামুটি ৭ই জুলাই থেকে ফজলি আম পাকে।

আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এতে পাবেন ভিটামিন এ, সি, ই, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, কপার, ফলেট, ফাইবার ও প্রোটিন। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে আম খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমরা নিয়মিত আম খাবো এবং দেশীয় এই ফলের উৎপাদন ও প্রচার প্রচারণা বেশি করে করবো।

ফজলি আমের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করতে পারলে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে প্রচুর পরিমাণে আম রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

লেখক

তথ্যসূত্র
দৈনিক যুগান্তর
দৈনিক কালের কণ্ঠ
দৈনিক আনন্দবাজার
পূর্ববর্তী পরবর্তী