চাষের মধু কি খারাপ?

মধু প্রকৃতির এক বড় নেয়ামত। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ও রুপচর্চায় যুগ যুগ ধরে মধু খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে নানাবিধ পুষ্টিগুণ বিবেচনায় মধুর চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে মধুর যে চাহিদা এটা তিনভাবে পূরণ করা হচ্ছে।
১. প্রাকৃতিক চাকের মধু
২. চাষকৃত মধু
৩. আমদানিকৃত মধু
২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মধুর উৎপাদন ছিল  ১০,৬৫৫ মেট্রিকটন (বিসিক) । ছবি- ফেসবুক থেকে
বর্তমানে বিপুল পরিমাণ মধু বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। যদি আমাদের দেশে মধুর উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি, সবার ভিতরে দেশীয় মধুর গুণাগুণ প্রচার করা এবং খাঁটি মধুর নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে বিদেশ থেকে মধু আমদানি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমাদের দেশের বড় বড় সুপারশপে ঢুকলেই দেখা যায় নামিদামি বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির মধুতে সয়লাব। রংচং মাখিয়ে বিজ্ঞাপন ও উন্নত প্যাকেজিংয়ের কারণে ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ বিদেশি ব্রান্ডের মধু। এক্ষেত্রে আমরা যদি মধুর উৎপাদন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দেশের নাগরিকদের কাছে সুলভ মূল্যে ভেজাল মুক্ত দেশি মধু পৌঁছে দিতে পারি তাহলে হয়তো বিদেশ থেকে আমদানি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

প্রাকৃতিক চাকের মধু আহরণ ও সংরক্ষণ সেই সনাতন পদ্ধতিতেই হচ্ছে। যার কারণে মধুর সংগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। যদি উন্নত দেশের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়, তাহলে মধুর আহরণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও বন-জঙ্গল উজাড় করার কারণে মৌমাছির প্রাকৃতিক আবাসস্থলও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
দেশে প্রাকৃতিক চাকের মধু সবচেয়ে জনপ্রিয় । ছবি- ফেসবুক থেকে
চাষের মধুর বড় উৎপাদন ক্ষেত্র হলো বিভিন্ন ধরণের ফল ও ফসল । যত বেশি রবিশস্য যেমন সরিষা, কালোজিরা, ধনিয়া, শিম, সূর্যমূখী, লিচু চাষ হবে তত বেশি এসব ফুলের মধু উৎপাদন সম্ভব হবে। ফল ও ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মধুর উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় এই দিকেও নজর দিতে হবে। অনেকের মনে সন্দেহ থাকে যে চাষ করা মধু খাঁটি হবে কী না। মধুতে যদি কৃত্রিমভাবে কিছু না মেশানো হয় তাহলে সব ধরণের মধুই খাঁটি। সবাইকে চাষের মধুর গুণাগুণ সম্পর্কে জানানো এবং চাষের মধুর গুরুত্ব তুলে ধরতে পারলে মধুর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং আমদানি কমিয়ে হয়তো একসময় আমরাই বিদেশে মধু রপ্তানি করতে পারবো।

মধু চাষ ও মধু সংগ্রহের দিকে সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পেলে অদূর ভবিষ্যতে এই খাত অনেকদূর এগিয়ে যাবে। এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পরিশেষে বলবো দেশে উৎপাদিত মধু পান করুন, দেশের টাকা দেশেই রাখুন।

পূর্ববর্তী পরবর্তী